জন্ম- ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ
জন্মস্থান- কলকাতায়
পৈত্রিক নিবাস- গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়।
মৃত্যু- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ (মাত্র ২১ বছর বয়সে
প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- ছাড়পত্র
সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ- আকাল।
উপাধি- কিশোর কবি।
সাহিত্য কর্মঃ
ছাড়পত্র, ঘুম নেই , পূর্বাভাস , অভিযান , হরতাল , মিঠেকড়া
কবিতাটি- কবির ‘ছাড়পত্র’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত।
কবিতাটি প্রকাশিত হয় -১৯৪৮ সালে।
কবিতাটি- মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
এ কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে- বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে।
এক নজরে মাসি পিসিঃ
০১. এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়’- এখানে আঠারো বছরের তরুণ বয়সের কথা বলা হয়েছে।
০২. এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য – এখানে ব্যক্ত হয়েছে তারুণ্যের শপথ।
০৩. এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাস/ এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো – এ বয়স বলতে বোঝানো হয়েছে আঠারো বছর বয়স।
০৪. এ বয়স নতুন কিছু তো করে। এখানে ব্যক্ত হয়েছে – তারুণ্যের সৃষ্টিধর্মের স্বরূপ।
০৫. কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে কত বছর বয়সে – আঠারো।
০৬. ‘আঠারো বছর জানে না কাঁদা’ কেন? – কারণ এ বয়সে মানুষ হয় আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মনির্ভরশীল।
০৭. এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা- কোন বয়সে? – ১৮ বছর বয়সে।
০৮. আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ এর কারণ কী? -এ বয়সটা মানব জীবনের উত্তরণের কাল।
০৯. আঠারো বছর লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে কী হয়? – কালো।
১০. আঠারো বছর বয়স কী নয়? – মাথা নোয়াবার নয়।
১১. কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে কোন বয়সে? – আঠারো বছর বয়সে।
১২. এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে- কেন? – কল্যাণের জন্য।
১৩. মানুষ কখন সাহসী হয়ে ওঠে? – যৌবনের শুরুতে।
১৪. সুকান্তের পৈত্রিক আবাস কোথায়? – গোপালগঞ্জ।
১৫. সুকান্ত কত বছর বয়সে মারা যান? – ২১ বছর বয়সে।
১৬. নজরুলের ধারায় সুকান্ত কী ধরনের কবি ছিলেন? – বিদ্রোহী কবি।
১৭. আঠারো বছর বয়স কবে প্রকাশিত হয়? – ১৯৪৮ সালে।
১৮. কবি এদেশের বুকে কী নেমে আসার কথা বলেছেন? – আঠারো বছর বয়স।
১৯. আঠারো বছর বয়স আত্মাকে কোলাহলে সঁপে- কীসের কোলাহলে? – শপথের।
২০. কবিতায় ‘আঠারো বছর বয়স’ কতবার উল্লেখ করা হয়েছে? – সাতবার।
২১. কয়টি স্তবকের সমন্বয়ে কবিতাটি রচিত? – আট।
২২. আঠারো বছর বয়সে অবিশ্রান্ত রূপে কী আসে? – আঘাত
২৩. কবির কাছে আঠারো বছরে ছুটে চলাকে কী মনে হয়েছে? – বাষ্পের বেগে স্টীমারের মত।
গুরুত্বর্পূণ শব্দার্থঃ
সালতি = শালকাঠ নির্মিত বা তালকাঠের সরু ডোঙা বা নৌকা।
সোমত্ত = সমর্থ (সংসারধর্ম পালনে), যৌবনপ্রাপ্ত।
খুনসুটি = হাসি তামাশাযুক্ত বিবাদ-বিসম্বাদ বা ঝগড়া।
বেমক্কা = স্থান-বহির্ভূত। অসমাপ্ত।
পেটে শুকিয়ে লাথি ঝাঁটা = পর্যাপ্ত খাবার না-জুগিয়ে কষ্ট দেওয়ার পাশাপাশি লাথি ঝাঁটার মাধ্যমে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা।
কলকেপোড়া ছ্যাঁকা = তামাক সেবনে ব্যবহৃত হুঁকার উপরে কলকেতে থাকে যে আগুন তা দিয়ে দগ্ধ করা।
পাঁশুটে = ছাইবর্ণবিশিষ্ট, পাংশুবর্ণ, পান্ডুর, ফ্যাকাশে।
ব্যঞ্জন = রান্না করা তরকারি।
বাজারের তোলা = বাজারে বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করা খাজনা।
রসুই চালা = যে চালার নিচে রান্না করা হয়। রান্নাঘর।
কাটারি = কাটবার অস্ত্র।
এর্কি = ‘ইয়ার্কি’ শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারণ হাস্য- পরিহাস বা রসিকতা।
কবি পরিচিতিঃ
সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈতৃক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া। সুকান্ত ভট্টাচার্যের প্রথম লেখাপড়া শুরু হয়েছিল মকলা মন্তির নামে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে তিনি বেলেঘাটায় দেশবন্ধু হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে এই বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দেন। এতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হলে তিনি সে বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক দিতে পারেননি। অন্য বিদ্যালয় থেকে তিনি দু’বার পরীক্ষা দিয়েও ম্যাট্রিক পাশ করতে ব্যর্থ হন। ১৯৪৪ সালে তিনি শেষবার পরীক্ষা দেন। অঙ্কের জন্যই তিনি পাশ করতে পারেননি।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবি জীবন ও রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল একই সময়ে। তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ছাত্র অবস্থাতেই তিনি প্রগতিশীল সংগঠন ‘ছাত্র ফেডারেশনে’ যোগ দেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৩৫০ সনের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশন একদিকে নিরস্ত্র জনতার পক্ষে, অপরদিকে ভারতীয় পূর্ব সীমান্ত আসামে জাপানি ফ্যাসিস্ট আক্রমণের বিরুদ্ধে জোর লড়াই শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে তখন গড়ে ওঠে ‘কিশোর বাহিনী’। সুকান্ত এই কিশোর বাহিনী সংগঠনে ব্যাপকভাবে আত্মনিয়োগ করেন। সুকান্ত যুদ্ধ বিরোধী ও দুর্ভিক্ষ বিরোধী কবিতা লিখে জনগণের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকায় সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা আজীবন সম্পাদক ছিলেন। পার্টির জন্য কাজ, লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে তিনি ব্যাপকভাবে জড়িত হয়ে পড়েন। পরিশ্রম ও অনিয়মের জন্য তিনি রোগাক্রান্ত হন।
সুকান্ত ভট্টাচার্য মাত্র একুশ বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১২ই মে (১৩৫৪ সনের ২৯ শে বৈশাখ ) যাদবপুর টি বি হাসপাতালে প্রাণত্যাগ করেন।
সুকান্ত ভট্টাচার্য অল্প বয়স থেকে অনবরত লিখতে থাকলেও জীবদ্দশায় কোন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। মৃত্যুর আগে তিনি যখন মৃত্যু শয্যায় তখন তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘ছাড়পত্র’ ছাপা হচ্ছিল।